অনলাইনে উত্যক্তকরণ রোধে গ্রামীণফোনের উদ্যোগ

Jun 21, 2016

আগামী পাঁচ বছরে টেলিনর এশিয়ার  বাংলাদেশ, ভারত, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, পাকিস্তান, এবং থাইল্যান্ডের বাজারে ৫০ কোটি তরুণ তরুণী প্রথমবারের মতো ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত হবে। তারা যাতে অনলাইনের সুফল ভোগ এবং  ইন্টারনেটের নেতিবাচক দিক থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে সে বিষয়ের উপর শিক্ষা প্রদানের পরিকল্পনা করেছে গ্রামীণফোন এবং তার অভিভাবক কোম্পানি টেলিনর।

সাইবারবুলিং বা সাইবার উত্যক্তকরণ মূলত ইলেক্ট্রনিক কমিউনিকেশন প্রযুক্তির মাধ্যমে করা হয়ে থাকে যার মূল উদ্দেশ্যই হলো উত্যক্ত করা। বাংলাদেশের ৪৯ শতাংশ স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী সাইবার বুলিং কোন না কোন সময়ে এর শিকার, ফলে অনলাইন নিবর্তন হ্রাসে শিক্ষার ভূমিকা ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।

গ্রামীণফোনের হেড অব কমিউনিকেশনস নেহাল আহমেদ বলেন, “তরুণদের প্রতি বিশেষ নজর দিয়ে ইন্টারনেটে নিরাপত্তা বাড়ানোর ক্ষেত্রে গ্রামীণফোন ও টেলিনর দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ। টেলিনরের এশিয়া অঞ্চলের আওতায় আগামী ২০১৭ সালের মধ্যে আনুমানিক ১০ কোটি তরুণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী তৈরি হবে। আর তাই সাইবারবুলিং কমানোর লক্ষ্যে এখন থেকেই এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিটে আমাদের উদ্যোগ  অনেক গুরুত্বপূর্ণ।  "

দেশভিত্তিক সাইবার বুলিং এর পরিসংখ্যান

বাংলাদেশ

বাংলাদেশের প্রায় ৪৯ শতাংশ স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী কোনো না কোনোভাবে সাইবার বুলিং শিকার। তারা হয় নিজেরা উত্যক্তকরনে শিকার অথবা নিজেরাই অন্যকে উত্যক্ত করেছে।একই সংখ্যক শিক্ষার্থী বন্ধুবান্ধবের চাপে এসব কাজ করে থাকে।

পাশাপাশি, অর্ধেকেরও কম হুমকির শিকার তরুণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হুমকির কিংবা অনলাইন নির্যাতনের বিষয়টি অভিভাবক কিংবা স্কুলের শিক্ষকের কাছে প্রকাশ করে। এশিয়ার অন্যান্যদের দেশের তুলনায় বাংলাদেশের তরুণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা অনলাইনের বিভিন্ন সমস্যার কথা অন্যান্যদের সঙ্গে আলোচনা করে না বললেই চলে।  

ভারত

আগামী ২০১৭ সালের মধ্যে ভারতে প্রায় ১৩৪ মিলিয়ন শিশু ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু করবে প্রয়োজনীয় তথ্য এবং জ্ঞান অর্জন করতে। আট থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশু (৫৩%) বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে যারা কোনো না কোনোভাবে একবার হলেও সাইবার হুমকির শিকার হয়েছে। শারীরিক হুমকি কিংবা নির্যাতনের চেয়ে অনলাইন হুমকি নিয়ে সে দেশের অভিভাবকরা চরম দুঃচিন্তায় ভুগছেন। বিশ্বের তুলনায় ভারতীয় অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের ইন্টারনেট ব্যবহার সীমাবদ্ধ করার সম্ভাবনা ২০ শতাংশ বেশি।

মালয়েশিয়া

দেশটির ৯০ শতাংশেরও বেশি স্কুল পড়–য়া শিক্ষার্থী ইন্টারনেট ব্যবহার করে। প্রতি চারজনের মধ্যে একজন সাইবার হুমকির শিকার হওয়ার তথ্য পাওয়া গিয়েছে দেশটিতে। তবে গত ২০১৫ সালের জরিপে দেখা গিয়েছে মালয়েশিয়ার বেশিরভাগ তরুণ ইন্টারনেট ব্যবহারাকারী অনলাইনের এসকল হুমকি, নির্যাতনের ব্যাপারে সচেতন। সহযোগিদের দ্বারা অনলাইনে হুমকির মুখে পড়লে তারা সঙ্গে সঙ্গে প্রাইভেট সেটিং অথবা ব্লক অপশন ব্যবহার করে থাকে। এছাড়া তারা বিষয়টি স্কুলের শিক্ষক কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে থাকে। তবে বিশ্বস্ত প্রাপ্ত বয়স্কদের সঙ্গে আলোচনা না করে সাইবার হুমকি নিজে থেকেই বন্ধ হয়ে যাবে চিন্তা করে অনেক তরুণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী চুপ করে বসে থাকতে পারে যার সম্ভাবনাও অনেক।  

মালয়শিয়ার শিক্ষার্থীদের মধ্যেই অধিকাংশই ইন্টারনেটে সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য আচরণের বিষয়ে সচেতন এবং তারা অভিভাবকদের স্থির করা অনলাইন রীতি মেনে চলে। সার্বিকভাবে ৬৭ শতাংশ তরুণ ইন্টারনেট ব্যবহারীরা মনে করে তারা সাইবার হুমকির বিষয়টি নিজেরাই অথবা প্রাপ্তবয়স্কদের সহায়তায় সমাধান করতে পারবে। টেলিনরের আওতাধীন ডিজি-এর সাইবারসেফ প্রোগ্রাম সহ অন্যান্য উদ্যোগের কারণে  মালয়েশিয়ার স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মাঝে ইন্টারনেট নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতনতার হার বেশি।

থাইল্যান্ড

থাইল্যান্ডের ৩৩ শতাংশ স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী অনলাইন কিংবা অফলাইনে উত্যক্তকরণের শিকার হয়। এমনকি হুমকির শিকার যারা হচ্ছে তারাই আবার অনলাইনে অন্যান্যদের হুমকি দেয়ার মতো অন্যায় কর্মকান্ডে লিপ্ত হচ্ছে। এছাড়াও অনভিপ্রেত ওয়েবসাইটে যাওয়া ও অনলাইনে কুরুচিপূর্ণ ভাষার ব্যবহারের মাধ্যমে ৩৫ শতাংশ থাই শিক্ষার্থী সহযোগিদের দ্বারা অনলাইন হুমকির শিকার হয়ে থাকে।

হুমকির শিকার হয়ে পাল্টা হুমকি দেয়ার মতো কান্ড ঘটিয়ে অনলাইনের এধরনের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করতে পারে থাইল্যান্ডের ৫৯ শতাংশ শিক্ষার্থী। এখানেও বিশ্বস্ত প্রাপ্ত বয়স্কদের দেখানো পথ অনুসরণ করে থাকে শিক্ষার্থীরা। উল্লেখ করার মতো বিষয় হচ্ছে কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী অনলাইনে এধরনের হুমকি সমস্যার সমাধান নিজেরা করতে পারে না। প্রায় ৫৫ শতাংশ এক্ষেত্রে অভিভাবকদের সাহায্য নিয়ে থাকে যেখানে বাংলাদেশে মাত্র ৩৮ শতাংশ শিক্ষার্থী অভিভাবকদের কাছে এধরনের সমস্যার কথা প্রকাশ করে থাকে। অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়মিত অনলাইনের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করলে অনেকটাই নিরাপদে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়।

অনলাইন ওয়ার্ল্ড

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে  স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের উপর সাইবার হুমকি চিহ্নিত করতে ‘বি স্মার্ট ইউজ হার্ট’ শীর্ষক প্রোগাম নিয়েছে টেলিনর। প্রোগ্রামের আওতায় অনলাইন হুমকি সম্পর্কে শিশু ও অভিভাবকদের প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করে টেলিনর যাতে করে কম্পিউটারের পাশাপাশি মোবাইলেও নিরাপদে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়।

তরুণদের নিরাপদে ইন্টারনেট ব্যবহারবিধি সম্পর্কে আরো জানতে টেলিনর গ্রুপের প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যাবে প্যারেন্ট গাইড: হাউ টু টক টু ইওর চিল্ড্রেন এ্যাবাউট দ্যা ইন্টারনেট-এ।

এছাড়া সাইবার বুলিং ডে  সম্পর্কে জানা যাবে- https://www.cybersmile.org/stop-cyberbullying-day.


Back
Next

এই পেজ টি আপনার বন্ধু ও পরিবারের সাথে শেয়ার করুন

Follow Us

MyGP App

©2024 গ্রামীণফোন লিমিটেড টেলিনর গ্রুপের সদস্য

সাইট নির্দেশিকা